বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব বর্ণনা কর

প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব বর্ণনা কর
কোনো দেশের জনসংখ্যার গঠন ও বন্টনের উপর নির্ভর করে সে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আর কোনো দেশের সম্পদের তুলনায় যদি জনসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। অপরদিকে, জনসংখ্যা কম হলে প্রাপ্ত সম্পদ সমূহকে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ব্যবহার করা যায় না।তাহলে দেখা যাচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য ও স্বল্পতা উভয়ই সমস্যা।

ভূমিকা

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম।কেননা জনসংখ্যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একদিকে যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে অন্যদিকে তেমনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।বাংলাদেশ একটি জনবহুল উন্নয়নশীল দেশ।জনসংখ্যার দিক থেকে এদেশের অবস্থান বিশ্বের অষ্টম। তবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণে এদেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ সমূহ

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী। তন্মধ্যে প্রধান কারণ সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১) ভৌগোলিক পরিবেশ

শীত প্রধান অঞ্চলের মহিলাদের তুলনায় গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের মহিলাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।তাই বাংলাদেশের আবহাওয়া উষ্ণ এবং এখানে নারী-পুরুষ উভয়েই অতি সহজে সন্তান জন্মদানে সক্ষম বলে এ দেশের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২) শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যাভাস

শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক।বাংলাদেশের মানুষ ভাত,মাছ,গম,আলু ইত্যাদি শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য বেশি ভক্ষণ করে। ফলে তাদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে এবং বহু সংখ্যক সন্তান জন্ম দেয়।

৩) বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো ব্যাপকভাবে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন রয়েছে। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব মেয়েদের ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে হয় তাদের সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বেশি।ফলে বাল্যবিবাহের কারণে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, এদেশে বহুবিবাহের প্রথা প্রচলিত থাকায় একই পরিবারের একাধিক স্ত্রী সন্তান জন্মদানের অশুভ প্রতিযোগিতার কারণে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। সুতরাং বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন থাকায় এদেশের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪) দারিদ্র্য

বাংলাদেশের শতকরা ৪০ ভাগ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এদের অধিকাংশই অশিক্ষিত এবং এরা আধুনিক সমাজব্যবস্থা থেকে অনেক পশ্চাতে পড়ে আছে। আর অশিক্ষা এবং আধুনিক ধ্যান-ধারণা থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে এদেশের দরিদ্র পিতা-মাতারা উপার্জন বৃদ্ধির চেষ্টা না করে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে অধিক সন্তান জন্ম দেয় যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

৫) চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসা ও প্রতিষেধক হিসাবে নানা প্রকার ওষুধ আবিষ্কার হওয়ায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মৃত্যুর হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। ২০০৪ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্মহার ছিল প্রতি হাজারে ২০.৮ জন এবং মৃত্যুহার ছিল প্রতি হাজারে ৫.৭ জন। দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পশ্চাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

৬) পুত্র সন্তান লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা

এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো পুত্র সন্তান লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা।একটি পুত্র সন্তানের আশায় দম্পতিরা একাধিক কন্যা সন্তান গ্রহণ করে। তদুপরি তারা নিরাশ হয় না। এ প্রসঙ্গে ড.এম.এ. মান্নান বলেন, "৪০ টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পুত্র সন্তান লাভের প্রবণতায় বাংলাদেশ শীর্ষে।

৭) নারী শিক্ষার অভাব

বাংলাদেশে নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে এখনো তেমন ব্যাপকতা আসেনি। শিক্ষিত নারী জীবনের প্রতি অধিক সচেতন বলে বেশি সন্তান নিতে চায় না। কিন্তু অশিক্ষিতরা এ বিষয়ে সচেতন নয়, তাদের চিন্তা-চেতনা এখনো স্বামী সেবার মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন ও গৃহকর্ম সম্পাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি।

৮) আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে উন্নত বিশ্বসহ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।১৯৯১ সালে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৬.১ বছর। ২০০৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৫.১ বছরে। বর্তমান ২০২৫ সালে আয়ুষ্কাল অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।আয়ুষ্কালের এ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে।

৯) ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি

সুস্থ সক্ষম প্রত্যেক নর-নারীর জন্য বিবাহ ফরজ। এটা ইসলাম ধর্মের কথা।অন্যান্য ধর্মেও বিবাহের প্রতি জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিবাহের বয়সকাল পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলেও গ্রামাঞ্চলে তা এখনো প্রসার লাভ করেনি। ফলে ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

১০) অনুন্নত জীবনযাত্রা

বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত নিম্নমানের। এদেশের দরিদ্র মানুষেরা কেবল কোনো রকমে বেঁচে থাকার কথা ভাবে। উন্নত জীবনযাত্রার কথা তারা ভাবে না। তাই অধিক সন্তান জন্ম দিতে তারা মোটেই চিন্তা-ভাবনা করে না। তাছাড়া পরিবার প্রতিপালনের ব্যয় কম বলে অনেক ছেলে-মেয়ে অল্প বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

১১) জন্মনিয়ন্ত্রণে অনীহা

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মভীরু। ফলে তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করাকে রীতিমতো খোদা বিরোধী কাজ বলে মনে করে। তাই তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। যার ফলে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

১২) কুসংস্কার

বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মানুষ এখনো কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাদের ধারণা,"মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দিবেন তিনি।"কুরআন মজিদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।"এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সব দিকে বিবেক বুদ্ধি খাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। একশ্রেণীর মানুষ যথাযথ জ্ঞানের অভাবে বংশ বিস্তারকে ধর্মীয় বিধানের একটি অংশ বলে মনে করে।

১৩) মহিলাদের কর্মসংস্থানের অভাব

মহিলাদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভাব বিস্তার করে।শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা এবং পর্দা প্রথার দরুন আমাদের দেশের মহিলাদের কর্মস্থল ও দায়িত্ব কেবল সংসারের বেড়াজালে আবদ্ধ। এ সময় অলস জীবনের নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য একজন গৃহ- বধূ খুব দ্রুত একটি সন্তান কামনা করে।

১৪) শিক্ষার অভাব

বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত। অশিক্ষিত লোকেরা বৈবাহিক দায়িত্ব, ছেলে-মেয়েদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও মানুষ করার দায়িত্ব যথাযথভাবে বুঝে না। ফলে তারা অধিক সন্তান জন্ম দিতে কুন্ঠিত হয় না। এতে জনসংখ্যার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।

১৫) সামাজিক অবকাঠামো

বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষের প্রধান অবলম্বন কৃষি।আর কৃষি কাজে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অবদান বেশি বলেই কৃষিভিত্তিক পরিবারে পুত্র সন্তানের গুরুত্ব বেশি। আবার চর ও পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ অধিক সামাজিক প্রতিপত্তির আশায় অধিক সন্তান কামনা করে। এসব কারণে আমাদের গ্রামাঞ্চলে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৬) আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ বৃদ্ধাবস্থায় আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সন্তান বেশি হলে আর্থিক আয় বৃদ্ধি পাবে এবং সমাজের অন্যরা ভয় পাবে এরূপ ভেবে অনেকেই অধিক সন্তান জন্ম দিয়ে থাকে।

১৭) বিনোদনের অভাব

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ চিত্তবিনোদনের সুযোগ ও অন্যান্য সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে তাদের জীবনে জৈবিক তাড়নার প্রভাব বেশি এবং সে তাড়না নিবৃত্ত করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মিলনকেই তারা বিনোদনের প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয়। এটিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বহু বিধ কারণে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাংলাদেশে জন্মহার হ্রাসের কর্মসূচি সম্পূর্ণ সফল না হওয়ায় জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জন্মহার নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত ব্যবস্থাবলি,স্বাস্থ্য সুবিধা ও সেবা প্রদান, উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব

কোনো দেশের জনসংখ্যা যখন দেশের আয়তন ও সম্পদের তুলনায় অধিক হারে বৃদ্ধি পায় তখন তা দেশের জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশও তদ্রুপ একটি দেশ, যে দেশের আয়তন ও সম্পদ জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। তাই এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব না পড়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নিম্নে বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করা হলো:

১) বনজ সম্পদ বিনষ্ট

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজ সম্পদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণ করতে হয়। আর এজন্য প্রতিনিয়ত গাছপালা কেটে বনজ সম্পদ উজাড় করা হয়। কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের শতকরা ২৫ ভাগ বনাঞ্চল থাকা আবশ্যক হলেও বর্তমান বাংলাদেশে শতকরা ১৭.৫১ ভাগ বনভূমি রয়েছে।এছাড়া বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বনাঞ্চল ব্যাপক ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

২) পানি দূষণ

অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে গিয়ে এদেশের অধিকাংশ শিল্প-কারখানা ঘনবসতিপূর্ণ নগরে এবং মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে বিভিন্ন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার বর্জ্য শোধনের তেমন কোনো সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ফলে এসব শিল্পের বর্জ্য পদার্থ আশেপাশের নর্দমায় বা নদীর পানিতে ফেলা হয় যা পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।

৩) পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের উপর বিশেষ করে এর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য অধিক খাদ্য, অধিক কর্মসংস্থান, অতিরিক্ত বাসস্থান এবং ব্যাপক অবকাঠামোর প্রয়োজন হওয়ায় পরিবেশের উপর অধিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এদেশের পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।

৪) শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ তথা পরিবেশ দূষণের জন্য বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে অনেকাংশে দায়ী করা যায়।কেননা অতিরিক্ত জনসংখ্যার কাজের চাহিদার জন্য অধিক সংখ্যক কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর এতে করে কলকারখানার বিকট আওয়াজ, যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ণ ইত্যাদি নানাভাবে শব্দ দূষণ সৃষ্টি করছে।এছাড়াও প্রতিনিয়ত মাইকের আওয়াজ শব্দ দূষণের মাধ্যমে পরিবেশের স্বাভাবিকতা নষ্ট করছে।

৫) সামাজিক পরিবেশের অবনতি

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষ দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও হতাশার মধ্যে জীবনযাপন করে। এরূপ পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়-অন্যায় বোধ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, খুনখারাবি, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, শ্লীলতাহানি ইত্যাদি সামাজিক অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বেকারত্বের অভিশাপে তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়। নৈতিক অধঃপতনের ফলে নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশা ও ব্যভিচার বেড়ে যায়। আর এভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সামাজিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে।

৬)গ্রিন হাউসের প্রভাব

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ওজোন স্তর তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে এবং সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি ওজোন স্তর ভেদ করে মানুষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। আর এ প্রভাবই গ্রিন হাউস প্রভাব নামে পরিচিত। গ্রিন হাউসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে পৃথিবীর উপকূল ভাগ প্লাবিত হবে। বিশেষ করে গ্রিন হাউসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হতে পারে।

৭) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে এদেশের মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। আর অতিরিক্ত জনসংখ্যার দরুন বাংলাদেশের মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস এবং উপযুক্ত ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

৮) জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এদেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কেননা অতিরিক্ত জনসংখ্যা তার আমিষের অভাব পূরণ করতে গিয়ে বনের বিভিন্ন প্রাণী শিকার করে সেগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে।আর বন্যপ্রাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাখির মাংস আজ মানুষের প্রিয় খাদ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।

৯) রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা দেখা দেয়।কিন্তু এদেশের সম্পদ ও খাদ্য সীমিত হওয়ার দরুন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। বাড়তি মানুষের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়।এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারে মাছ, পাখি ইত্যাদি আজ হুমকির সম্মুখীন। ফলে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

১০) আবাসন সমস্যা

বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা ভয়াবহ আবাসিক সমস্যার সৃষ্টি করছে। এদেশের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত আবাস নির্মাণ করতে গিয়ে একদিকে যেমন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি চরম দারিদ্রতার কারণে অনেকের পক্ষেই আবাসিক গৃহ নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে অসংখ্য লোক গৃহহীন অবস্থায় অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।


বাঁচার তাগিদে অনেক সময়ে অসহায় গৃহহীন মানুষ চলে আসে শহরে।যার ফলে শহরাঞ্চলে গড়ে উঠে অসংখ্য বস্তি।এসব বস্তিতে গড়ে উঠে মাদকের আখড়া,বাসা বাধে এইডস,সিফিলিস,গনোরিয়া,জন্ডিস সহ নানা ঘাতক ব্যাধি যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

১১) ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি

বর্তমানে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যার আবাসন সমস্যার সমাধানের জন্য আবাদি ভূমি, বাগান বাড়ি, বনভূমি ধ্বংস করে ও পাহাড় কেটে বাস গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে।এতে ভূপৃষ্ঠ ক্ষয় হয়ে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

শেষ কথা

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে,পরিবেশের উপর বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ প্রভাব ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।আর বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এরূপ গতিধারা অব্যাহত থাকলে তা এক পর্যায়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাতে পারে যা এতদ্বঞ্চলে মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।সুতরাং আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url