বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী?-বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সমূহ আলোচনা কর
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানতে চান বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী?-বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সমূহ সম্পর্কে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমান পৃথিবীর সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব সমগ্র বিশ্বে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।আজকের আর্টিকেলে বৈশ্বিক উষ্ণতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।আর মেরু অঞ্চলের বরফ গলন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ প্রভাব। এছাড়াও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের নানাবিধ প্রভাব রয়েছে।
ভূমিকা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত বিষয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমানে সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট একটি রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, কৃষি উৎপাদন হ্রাস, রোগ-ব্যাধির বিস্তার, খাদ্যাভাব, দারিদ্রসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশগত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির সামগ্রিক প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তি, গ্রুপ বা সংস্থা বহু বছর ধরেই পর্যবেক্ষণ এবং বহু গবেষণা চালিয়ে আসছেন। যেসব পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা থেকে পাওয়ার তথ্য ও উপাত্ত খুবই উদ্বেগজনক। আর এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে গবেষকরা পরিষ্কার জানতে পেরেছেন, পৃথিবী এরই মধ্যে একটি বিপদজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে এই বিষয়ে কোন দ্বিমত সৃষ্টি হয়নি। তবে এর জন্য দায়ী দেশ সমূহের মধ্যে রয়ে গেছে তীব্র বিতর্ক। উন্নত ও অনুন্নত বিশ্ব একে অপরকে এর জন্য দোষারোপ করে চলেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী?
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত এবং বিতর্কিত বিষয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে সাধারণভাবে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বোঝায়। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে কোন বিতর্ক না থাকলেও এর কারণ সম্পর্কিত আলোচনায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্কের। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বিগত কয়েক দশক ধরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ প্রক্রিয়া বর্তমানে অব্যাহত আছে। বিগত ১০০ বছর বিশ্বের তাপমাত্রা ৬°সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাসকে দায়ী করা হয়।
আইপিসিসি (২০০৭) এর তথ্য মতে,"Most of the obsdrved increase in globally overaged temperatures since the mid - 20th century is very likely due to the observed increase in anthropogenic greenhouse gas concentrations."আইপিসিসি (২০০৭)আরও জানায় বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.১ থেকে ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা, লবণাক্ততা, বন্যা,রোগ-ব্যাধি বিস্তার,কৃষি উৎপাদন হ্রাসসহ নানাবিদ আর্থ-সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন এবং গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সমূহ
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমান পৃথিবীর সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর কারণ বিজ্ঞানী ও গবেষক দলের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ গড়ে উঠেছে। আর একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক মনে করেন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী আবার অন্য একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক মনে করেন এটি মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পিছনে যে কারণই দায়ী থাকুক এর প্রভাব নিয়ে কোন বিতর্ক সৃষ্টি আজও হয়নি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১/শিল্পায়ন
শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষি সমাজ শিল্প সমাজে রূপান্তর লাভ করে। Eric E.Lampard বলেন, "It changed the western world from rural and agricultural society to a basically urban and industrial society."১৭৬০ সাল থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে ইউরোপে যে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয় সেটি মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে ইউরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।আর পরবর্তীতে এর প্রভাব বিশ্বের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। এ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে, যার ধারা বর্তমানেও বজায় আছে।
আর বর্তমানকালে এসে এর গতি কয়েকশত গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।শিল্প-কারখানাসমূহ প্রতিদিন বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ বায়ু, পানি ও মাটিতে নির্গত করে।এর ফলে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং একই সাথে পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করে। শিল্প-কারখানা সমূহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস ও রাসায়নিক পদার্থ নির্গমন করে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।
২/নগরায়ন
শিল্পায়ন ও নগরায়ন একই সাথে ঘটে। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে সমগ্র বিশ্বে নগরায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত বিশ্বের সাথে উন্নয়নশীল ও দারিদ্র্য বিশ্বের নগরায়নের মাত্রা পূর্বের তুলনায় বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।নগরায়নের ফলে গৃহ,অফিস-আদালত,শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি নির্মাণ এবং নতুন যানবাহন, গৃহ সামগ্রী, কলকারখানা প্রভৃতির সমন্বয় ঘটানো হয়। মূলত গ্রামীণ সমাজের স্থলে উন্নত জীবন-যাপন, জীবনের গতি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা প্রভৃতি প্রয়োজনে নগরায়ন ঘটানো হয়। মানুষ তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন করে,যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
৩/বিলাস সামগ্রীর ব্যবহার
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য বিলাস সামগ্রীর ব্যবহারকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। বিশেষত উন্নত বিশ্বের দেশ সমূহ বিভিন্ন বিলাস সামগ্রী যেমন-রেফ্রিজারেটর, রঙিন টেলিভিশন, পারফিউম,এরোসল,শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র, প্লাস্টিক ফোম প্রভৃতি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে।আর এসব বিলাসজাত সামগ্রী ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন সংক্ষেপে CFC গ্যাস উৎপন্ন হয়।এ ক্লোরোফ্লোরো কার্বন বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরকে বিনষ্ট করে দেয়। ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থেকে পৃথিবী ও এর জীব জন্তু, মানুষসহ বিভিন্ন জীবের নিরাপত্তা রক্ষা করে।
ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের অধিক নির্গমনের ফলে ওজোন স্তরের ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮৫ সালে নিউজিল্যান্ডের কাছাকাছি বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের ফাটল চিহ্নিত করা হয়েছে।ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের একটি অণু ওজনের প্রায় ২০০০ অণুকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠে বেশি মাত্রায় সূর্যের তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে। প্রতিনিয়ত CFC গ্যাসের উৎপাদন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে চলেছে।
৪/জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার
শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে দিন দিন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা, যানবাহন, বাসগৃহ, অফিস-আদালত, মার্কেট, বন্দর প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- পেট্রোল, তেল, গ্যাস, প্রভৃতির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এসব উৎস থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। এছাড়াও পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয়। আর জীবাশ্ম জ্বালানির অধিক ব্যবহার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।এভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটায়।
৫/সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপ
পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জল এবং অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ স্থল । আর এ বিপুল জলের অধিকাংশই সমুদ্র বক্ষ ধারণ করে আছে। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সমুদ্রের বিপুল জলরাশি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আর পৃথিবীর উৎপন্ন তাপমাত্রার একটি বড় অংশ সমুদ্র শোষণ করে। বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করার ফলে সমুদ্রের পানির স্বাভাবিক ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। সমুদ্রের পানিতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার ফলে একদিকে যেমন সামুদ্রিক জীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে তেমনি সমুদ্রের পানি তাপ শোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সমুদ্রের পানিতে অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, অর্থাৎ বেড়ে যায়।
৬/যুদ্ধ
বিগত শতাব্দীতে দু'টি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪-১৯১৮ সালে) এবং (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে)। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বর্তমান সময় পর্যন্ত ছোট-বড় যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই রয়েছে। এসব যুদ্ধ-বিগ্রহে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়ে বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে যায়। যা পরিমাণ হিসেবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করে, যার ফলে পৃথিবীর তাপ শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।এভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করে।
৭/পারমাণবিক বিস্ফোরণ
বিশ্বের অনেক দেশে পারমাণবিক শক্তি রয়েছে। আর এই পারমাণবিক শক্তির যে কোনো ধরনের বিস্ফোরণ পরিবেশের উপর মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনে। এছাড়া পারমাণবিক শক্তির তেজস্ক্রিয়তা এত বেশি যে তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে। আর পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডলে মিশে উত্তপ্ত করে ফেলে। ১৯৮৬ সালে দেখা যায়, সোভিয়েত রাশিয়ার চেরনোবিল নামক স্থানে যে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে বায়ুমণ্ডল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমগ্র পৃথিবীতে এর প্রভাব পড়ে।
৮/বৃক্ষ নিধন
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বৃক্ষ সরবরাহ করে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী কর্তৃক নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বৃক্ষ শোষণ করে খাদ্য তৈরি করে। কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে বায়ুমণ্ডলে উদ্বৃত্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয়, যা বায়ুমণ্ডলকে দ্রুত উষ্ণ করে তোলে। বনভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার, ইকোট্যুরিজম, বনভূমির উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভৃতির কারণে বৃক্ষ নিধন হয়ে থাকে। বৃক্ষ নিধন বৈশ্বিক উষ্ণতার সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।।
৯/কৃষির আধুনিকীকরণ
উন্নত প্রযুক্তি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক,সেচ প্রভৃতি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কৃষি আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার বিভিন্ন ধরনের গ্যাস উৎপন্ন করে, যা বায়ুমণ্ডলে গিয়ে মিশে বায়ুকে দূষিত করে। কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশক সামগ্রিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও কৃষিজাত ফসল সংরক্ষণ, উপজাত তৈরীর সময় ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন করা হয়, যা বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। আর এভাবে কৃষির আধুনিকীকরণ বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
১০/শিল্প বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা
শিল্প বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার ফলে ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সংঘটিত হয়। আর বিভিন্ন ধরনের শিল্প বর্জ্য চারপাশের পরিবেশকে দূষিত করে তোলে এবং উদ্ভিদের শ্বসনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। উদ্ভিদ শ্বসন প্রক্রিয়ায় বিঘ্নিত হলে অক্সিজেন উৎপাদন কমে যায় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। শিল্প বর্জ্য পানিতে মিশে পানির অক্সিজেন ঘাটতি সৃষ্টি করে। আর এভাবে শিল্প বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
১১/আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত
পৃথিবীতে বর্তমানে এমন অনেক আগ্নেয়গিরি আছে যে গুলো থেকে অগ্নুৎপাত ঘটে। আর অগ্নুৎপাতের ফলে ভূ-অভ্যন্তরের লাভা ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। আর এসব লাভা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ঘটনা পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে অগ্নুৎপাতের ভূমিকা রয়েছে।
১২/উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ
উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচে যায়। উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ থেকে মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় যা, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১৩/প্রাকৃতিক নিয়ম
বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য সাধারণত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। বিশ্বের স্বাভাবিক নিয়মেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বলে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন।প্ল্যাস্টোসিন পিরিয়ড ও কোয়াটানারি পিরিয়ডের প্রায় ১০ লক্ষ ২২ হাজার বছরের হিমবাহ, আন্ত:হিমবাহ এবং হিমালয়- উত্তর বিশ্বে উত্তর গোলার্ধে পরিবর্তন ও পরিণতির বিষয় ভূতত্ত্ববিদ ও আবহাওয়াবিদরা প্রায় ১০ লক্ষ ২২ হাজার বছর আগে প্ল্যাস্টোসিন গ্লোসিয়েল পিরিয়ড শুরু হয়। তখন থেকে উত্তর গোলার্ধের বিরাট অংশ চার বার বরফে ঢাকা পড়ে যায় এবং তিনবার বরফ শূন্য অর্থাৎ উত্তপ্ত হয়ে যায়
চতুর্থ হিমবাহের পর হিমবাহ-উত্তর অবস্থা হয়। অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে উত্তপ্ত হতে শুরু করে। এটা ২২ হাজার বছর ধরে চলছে। এ উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ার অবস্থা আর কত চলবে তা কেউ বলতে পারে না। এ স্বাভাবিক উত্তাপ বৃদ্ধিকে কেউ ঠেকাতে পারে না।অবশ্য প্রাকৃতিকভাবে এ পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অত্যন্ত মন্থর গতিতে।
শেষ কথা
সমগ্র বিশ্ব বৈশ্বিক উষ্ণায়ন জনিত কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের রাজনীতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন অন্যতম ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের নানাবিধ প্রভাব রয়েছে। যেমন-জলবায়ু পরিবর্তন,প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি,মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র ধ্বংস, রোগ-ব্যাধির বিস্তার এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী?-বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।আশাকরি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।