বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা আলোচনা কর

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলে বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।
বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা আলোচনা কর
বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পরিবহন ছাড়া আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রসার সম্ভব নয়।

ভূমিকা

সম্পদের বন্টন পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। আবার পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী মানুষের চাহিদার ধরনও আলাদা।এ কারণে পৃথিবী ব্যাপী মানুষ ও দ্রব্যের স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার উৎপত্তি।

বিশ্ব বাণিজ্য

এক দেশের সাথে অন্য দেশের পুঁজি, দ্রব্য ও সেবা বিনিময়ের সামগ্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্ব বাণিজ্য বলে। বর্তমান বিশ্বে কোন দেশ এককভাবে তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য বা সেবা উৎপাদনে সক্ষম নয়।এ কারণে বিশ্ব বাণিজ্য হয়ে থাকে। আর বিশ্ব বাণিজ্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল পরিবহন ব্যবস্থার উপর।

পরিবহন

সাধারণত পরিবহন বলতে বোঝায় স্থল, জল ও আকাশ পথে মানুষ ও মালামাল স্থানান্তর ব্যবস্থা। অদৃশ্য বা তারের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণ, পাইপ লাইনের মাধ্যমে তরল বস্তুর স্থানান্তর বা লিফ্টের মাধ্যমে উলম্ব স্থানান্তরও পরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্গত। এছাড়াও সম্পদের স্থানিক বা আঞ্চলিক অসমতা দূর করতে তথা বিশ্ব বাণিজ্যের বিকাশে পরিবহনের ভূমিকা অপরিসীম।


বিভিন্ন ধরনের স্তল, জল ও আকাশ পথে পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। তার মধ্যে সড়ক রেল অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন এবং আকাশ পথে বিমান পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্ব বাণিজ্যের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।


কোন কোন অঞ্চলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়ামের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়। সাম্প্রতিককালে সাবমেরিন ক্যাবল ও স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং এর নতুন ধরনের বিশ্ব বাণিজ্য ধারণা উন্মুক্ত হয়েছে।

বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা

পরিবহন মানব সভ্যতার উৎকর্ষের এবং শিল্প বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নতির মাপকাঠি। নানা ক্ষেত্রে পরিবহন বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখে। নিম্নে সেটা বর্ণিত হল:

১) লোক চলাচল ও পণ্য আদান-প্রদান

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ হয়ে থাকে। পণ্য আদান-প্রদান পরিবহন ব্যবস্থার দ্বারাই সম্পন্ন হয়।পণ্য যাচাই, বাজার অনুসন্ধান ও পণ্য সংগ্রহের জন্য মানুষের গমনা-গমন পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। তাই লোক চলাচল ও পণ্য বিনিময়ের বাহন হিসেবে পরিবহনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

২) শিল্প স্থাপন

পণ্য উৎপাদিত হয় শিল্প কারখানায়। শিল্প স্থাপনের জন্য সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা একান্ত অপরিহার্য।কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা অবশ্যই প্রয়োজন। শিল্পাঞ্চলের সাথে সড়ক, রেল ও জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকলে শিল্পোন্নতি সহজ হয়।

৩) শ্রমের গতিশীলতা

পরিবহন শ্রমের ভৌগলিক বিভাজনের পক্ষে বিশেষভাবে সহায়ক। কারণ উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে পৃথিবীর বিশেষ অঞ্চল বিশেষ বিশেষ পণ্য উৎপাদনে সুনাম অর্জন করতে পারে। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে দক্ষ শ্রমিক এনে উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের গুণগতমান বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। যেমন- মালয়েশিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য বেশি উৎপন্ন ও রপ্তানি হয়।

৪) খনিজ সম্পদ আহরণ

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বহু প্রাকৃতিক সম্পদ বিদ্যমান। কখনো গহীন অরণ্যে, কখনো মরুভূমিতে, কখনো বা পাহাড়ের দূর্গম স্থানে খনিজ ও বনজ সম্পদ পাওয়া যায়।এ সম্পদ আহরণ করতে হলে সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন।দূর্গম দক্ষিণ আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়া বা আলাস্কা অঞ্চলের সোনা বা সাইবেরিয়া অঞ্চলের পেট্রোলিয়াম আহরণ উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার দ্বারায় সম্ভব হয়েছে।

৫) আমদানি-রপ্তানি

আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমেই বিশ্ববাণিজ্য সম্পন্ন হয়।তবে এক্ষেত্রে স্বল্প খরচে দ্রুত পণ্য পরিবহন জরুরী। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মোট বিশ্ব বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ সামুদ্রিক জাহাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে।বর্তমানে দেখা যায় যে, আধুনিক জাহাজে পচনশীল দ্রব্যও পরিবহন সম্ভব হয়। সুয়েজ খাল, পানামা খাল ইত্যাদি খননের ফলে সমুদ্র পরিবহন আরো সহজ হয়েছে।

৬) সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন

পরিবহনের মাধ্যমে কোন অঞ্চলে সম্পদের ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে জীবন যাত্রার মানের উন্নতি ঘটে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে ফলে বিশ্ব বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ সহজ হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, উন্নত আমেরিকার পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ যেমন- মেক্সিকো ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলের মানুষ আমেরিকাতে কাজ করে নিজ দেশে অর্থ প্রেরণের মাধ্যমে উন্নতি করতে পারছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিভিন্ন দেশে কাজ করে দেশের উন্নতি করছে।

৭) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা যেমন-বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গঠন, শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের নীতি নির্ধারণ, বিরোধ নিষ্পত্তি প্রভৃতি কাজে পরিবহন ব্যবস্থা প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে।

৮) জনবসতির বন্টন

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জনবসতি বন্টনের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার পরেই অনুকূল অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠে। এছাড়া প্রাকৃতিক কারণ জনিত দ্রব্যাদির ঘাটতি অঞ্চলে অন্যান্য জায়গা থেকে দ্রব্যাদি উন্নত পরিবহনের মাধ্যমে বহন করে আনা যায়, ফলে এসব অঞ্চলেও জনবসতি গড়ে ওঠে। যেমন-প্রাথমিক পর্যায়ে ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেষ্টারে কার্পাসের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও দেখা যায় যে উত্তম পানিপথের মাধ্যমে এখানে কার্পাস আমদানি করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কার্পাস বয়ন শিল্প গড়ে উঠেছিল।

শেষ কথা

সুতরাং এ কথা বলা অনস্বীকার্য যে পরিবহন ব্যবস্থা আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই বিশ্ব বাণিজ্য শুরু হয়েছে। পৃথিবীর যে অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা যত উন্নত সে অঞ্চলে বাণিজ্যের প্রসারও তত বেশি এবং সে অঞ্চল তত উন্নত। তাই উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের প্রসার সম্ভব নয়। আজকের আর্টিকেলে বিশ্ব বাণিজ্য প্রসারে পরিবহনের ভূমিকা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url