জলবায়ু পরিবর্তন কী ? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো বর্ণনা কর
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানতে চান জলবায়ু পরিবর্তন কী? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো সম্পর্কে।জলবায়ু পরিবর্তন বলতে জলবায়ুর পদ্ধতির পরিসংখ্যানগত বিষয়াবলীর মধ্যে পরিবর্তন অর্থাৎ গড় তাপমাত্রা, বৃষ্টি পাতের নিবিড়তা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ ইত্যাদির দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন।পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে।এতে কোন সন্দেহ নেই। অর্থাৎ আজকের আর্টিকেলে জলবায়ু পরিবর্তন কী? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো বর্ণনা করা হলো:
জলবায়ুর পরিবর্তন আজ বিশ্বব্যাপী উৎকণ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ পরিবর্তন বলাই বাহুল্য সূচিত হতে অনেক অনেক দিন লেগেছে।
ভূমিকা
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশ্ব জলবায়ুর যে পরিবর্তন হচ্ছে, তাই জলবায়ু পরিবর্তন। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের নানা পরিবর্তন হচ্ছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা। মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া।
আরো পড়ুন:জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তন কী?
একটি নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলের উপাদান সমূহের স্বল্প কয়েক দিনের গড় বা ১ থেকে ৭ দিনের গড় ফলকে আবহাওয়া বলা হয়।বায়ুমণ্ডলের উপাদান বলতে বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহের দিক ও তার গতিবেগ, বায়ুর আর্দ্রতা,মেঘের পরিমাণ ও গতিবেগ, বায়ুর আর্দ্রতা, মেঘের পরিমাণ,মেঘের প্রকারভেদ ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদিকে বোঝায়।
আর কোন স্থানের বা অঞ্চলের দীর্ঘ কালের ( ৩০ বছর বা তারও বেশি সময়ের) দৈনন্দিন আবহাওয়ার পর্যালোচনা করে বায়ুমণ্ডলের ভৌত উপাদানগুলোর যে সাধারণ অবস্থা দেখা যায়, তাকে ঐ স্থানের বা অঞ্চলের জলবায়ু বলে।বিজ্ঞানীদের মতে,বহু কাল আগে থেকেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে চলেছে।
আরো পড়ুন:জলবায়ুর উপাদান গুলো কি কি বর্ণনা কর
পৃথিবীর সকল শক্তির মূলেই রয়েছে সূর্যের আলো ও তাপ শক্তি যা পৃথিবীর সকল প্রাণীর জীবনধারণে সাহায্য করে।পৃথিবীতে প্রতিদিন যে সূর্যকিরণ পৌঁছায়,ভূপৃষ্ঠ তা শোষণ করে। আর শোষিত সূর্যকিরণ আবার মহাশূন্যে বিকিরিত বা প্রতিফলিত হয়। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। প্রাকৃতিক নিয়মের এই শোষণ বিকিরণ প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতানুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন হলো কোন জায়গায় জলবায়ুর গড় অবস্থার দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেইঞ্জ বলে"।এর ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহ
পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার জন্য বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে অনেকগুলো কারণ বা মতবাদ দেয়া হয়েছে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণের অভাবে এদের অনেকগুলোকেই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।যেসব কারণগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ বিজ্ঞানী একমত পোষণ করেন সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হলো: পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব কারণ সম্পর্কে অধিকাংশ বিজ্ঞানী একমত পোষণ করেন সেগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন-
১) প্রাকৃতিক কারণ
২) মানব সৃষ্ট কারণ
১) প্রাকৃতিক কারণ
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের বহিস্থ কারণ, পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ কারণ, কার্বন ডাই- অক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধি, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, প্লেট টেকটোনিক প্রভৃতি।
(ক)পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের বহিস্থ কারণসমূহ
জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের বহিস্থ যে সকল কারণসমূহ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো:
সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে পরিবর্তন
পৃথিবীর কোন স্থান দৈনিক ও বার্ষিক যে পরিমাণ সৌরতাপ গ্রহণ করে তার ওপর ঐ স্থানের জলবায়ুর প্রকৃতি নির্ভর করে। অর্থাৎ পৃথিবীর অক্ষে কৌণিক অবস্থানের পরিমাপ, আহ্নিক ও বার্ষিক গতির প্রভাব, পৃথিবী হতে সূর্যের দূরত্ব ইত্যাদির কারণে উক্ত স্থানের জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। এই নিয়ামক গুলো সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
পৃথিবীর অক্ষকোণের পরিবর্তন
পৃথিবীর অক্ষ উলম্ব রেখার সাথে সাড়ে ২৩°কোণ করে পৃথিবীকে আবর্তন করছে। উল্লেখ্য যে এই অবস্থানটি স্থির নয়। আর কৌণিক অবস্থান বেশি হলে শীত ও গ্রীষ্মের তাপমাত্রার তারতম্য অধিক হয়। পক্ষান্তরে কৌণিক অবস্থান কম হলে বিপরীত অবস্থা ঘটে।
পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন
পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।এই উপবৃত্তাকার কক্ষপথটির আকৃতি স্থির নয়। প্রায় ১১০০০০ বছরের ব্যবধানে এর আকৃতি প্রায় বৃত্তাকার থেকে উপবৃত্তাকার পর্যন্ত হয়ে থাকে।ফলে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্বের পরিবর্তন ঘটে শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে।এক্ষেত্রে বৃত্তাকার হলে তাপ বেশি উপবৃত্তাকার হলে তাপ কম হওয়ায় জলবায়ুর পরিবর্তন হয়।
সূর্যের অনুসূর অবস্থানের অয়ন চলন
সূর্য পৃথিবীর নিকটে আসে ৩ জানুয়ারি এবং দূরে যায় ৪ জুলাই।এ অবস্থানকে যথাক্রমে অনুসূর ও অপসূর বলে। আর সঙ্গত কারণে এর প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠে অঞ্চলভেদে আবহাওয়ার উপাদানের পরিবর্তনের সাথে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে।
সূর্যের শক্তি উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধি
জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যের শক্তি উৎপাদনে হ্রাস-বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। উল্লেখ্য অতীত হিং যুগ থেকে অদ্যাবদি জলবায়ু পরিবর্তনে সূর্যের শক্তি হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাব কাজ করেছে।
(খ)পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে যে কারণগুলোর চিহ্নিত করেছেন তা নিম্নে দেয়া হলো:
বায়ুমণ্ডলের গঠনের পরিবর্তন
পৃথিবী পরিবেষ্টিত বায়ুর পরিমণ্ডলকে বায়ুমণ্ডল বলা হয়।এ বায়ুমণ্ডলের সার্বিক অবস্থা বা উৎকর্ষ ঠিক পূর্বের অবস্থায় নেই। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলের উপাদানের পরিমাণের পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।
মহাদেশগুলোর স্থান পরিবর্তন
মহাদেশ ও মহাসাগরগুলো স্বতন্ত্র প্লেটের উপর অবস্থিত ফলে স্থির নয়। এছাড়া উচ্চতার রয়েছে তারতম্য। ফলে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা অনুযায়ী (পর্বত) তাপমাত্রার চাপের তারতম্য ঘটে এর প্রভাব পড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে।
মহাসাগর গুলোতে সঞ্চিত উত্তাপ
এ বিষয়ে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণা পূর্বক জলবায়ু পরিবর্তনে মহাসাগরে পানির উত্তাপ সম্পর্কিত যে সকল মতামত দিয়েছেন সেটা হলো- সমুদ্রতলের হ্রাস-বৃদ্ধি, তাপ সঞ্চয় হ্রাস-বৃদ্ধি, সমুদ্রস্রোত ইত্যাদির অনিবার্য পরিবর্তন প্রত্যক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে প্রমাণ করে থাকে।
(গ)কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধি
প্রাকৃতিক কারণেও বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়তে থাকে।যেমন-আগ্নেয়গিরির উদগীরণ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পেতে থাকে।যার ফলে পৃথিবী বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়।
(ঘ)আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বাতাসে প্রচুর গ্যাস ও কণা ছড়িয়ে দেয়। কণা সৌর বিকিরণ বাধাগ্রস্ত করে, ফলে তাপ কমায়। ঘনঘন বড় বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির মাধ্যমে তাপ বাড়িয়ে দেয়।
(ঙ) সৌর বিকিরণে তারতম্য
সূর্যের কিরণের তীব্রতার স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি উভয় পরিবর্তনই বৈশ্বিক জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।তিন-চার বিলিয়ন বছর আগে সূর্য যে শক্তি নির্গত করত, এখন তার চেয়ে বেশি শক্তি নির্গত করছে। এখনকার তুলনায় সে সময় ৩০% ভাগ শক্তি কম নির্গত করত।এখন যদি সূর্য আগে সেই পরিমাণ শক্তি নির্গত করতো তাহলে পৃথিবীতে তরল পানির অস্তিত্ব থাকত না।
২)মানব সৃষ্ট কারণ
ক)মানুষের বিলাসবহুল জীবন
মানুষের জীবনের গতি বজায় রাখতে গিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে যান্ত্রিক যান,যা পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য পুড়িয়ে পরিবেশ কে করছে দূষিত। মানুষের ভোগ-বিলাসের জন্য যেসব দ্রব্যের প্রয়োজন তা শিল্প কারখানায় তৈরি হচ্ছে। এসব শিল্প কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য পরিবেশের অন্যতম শত্রু। তাছাড়া প্রতিদিন শহরবাসীরা যে পরিমাণ বর্জ্য ত্যাগ করছে তাও পরিবেশকে দূষিত করছে। এছাড়া গুড়ো সাবান, ওষুধপত্র ও প্রসাধনী, এমনকি বহুল ব্যবহৃত প্লাস্টিক সামগ্রীও দূষণ ত্বরান্বিত করছে।
খ)ওজোন স্তর ক্ষয়
যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে ওজোন স্তর বিধ্বংসী রাসায়নিক উদগিরণ করে ওজোন স্তর ছিদ্র করছে। ফলে সূর্য থেকে ক্ষতিকর রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছাচ্ছে। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
গ)গ্রিন হাউজ গ্যাস
বর্তমান সময়ে গ্রিন হাউস গ্যাসের উৎপাদনে পৃথিবীর উষ্ণায়ন বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের একটি অন্যতম কারণ ধরা হয়। জলবায়ুর বৈজ্ঞানিক মডেলে এসব সূচককে ইংরেজিতে অনেক সময় Climate forcing বলে অভিহিত করা হয়।
ঘ)জনসংখ্যার স্ফীতি
জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে আবাসন ও চাষের জন্য বনভূমির উজাড় করা হচ্ছে। ফলে পৃথিবী থেকে প্রতি বছর ৪১ লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।এর মধ্যে এশিয়া থেকেই ধ্বংস করা হচ্ছে ২১ লাখ হেক্টর কৃষি জমি।
ঙ)যানবাহনের অদগ্ধীভূত কার্বন
যান্ত্রিক যানবাহন গুলো থেকে কার্বন সঠিকভাবে পুড়ে না বলে ধোঁয়া,কালি,ভুসা, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি নির্গত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
চ)ফসিল ফুয়েল জ্বালানি
কয়লা পোড়ালে সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড,ছাই, ধূলি প্রভৃতি নির্গত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে কম মাত্রায় বায়ু দূষণকারী পদার্থ বের হয়।
ছ)শিল্পোন্নত দেশগুলোর ভূমিকা
শিল্পোন্নত দেশে বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারখানা। এসবের ধোঁয়া ও নির্গত বায়ু পরিবেশ দূষিত করছে।
জ)কৃষি ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহার
পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর খাদ্য যোগানের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই জমিতে বারবার বা একাধিক ফসল ফলাতে হচ্ছে। আবার সেচ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ভূ-নিম্নস্থ পানি দূষিত হচ্ছে যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
ঝ)ফসলের অবশিষ্টাংশ পচন থেকে উদ্ভূত মিথেন
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফসলের চাষ। ফসলের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পচনের ফলে নিঃসৃত হচ্ছে মিথেন গ্যাস।বায়ুমণ্ডলের মিথেনের আয়ু ১০ বছর। বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটি ১৫%বেশি দায়ী।
ঞ)এসিড বৃষ্টি
বিভিন্ন যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোয়া এবং গ্রীন হাউস ইফেক্টের কারণে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে এসিড তৈরি করছে।এ এসিড যখন বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়ে তখন তাকে এসিড বৃষ্টি বলে। এর ফলে বনাঞ্চল,পশুপাখি বিলুপ্তি হতে পারে এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে পারে যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়।
ট)সমুদ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপ
পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় সমুদ্রের বিপুল জলরাশি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।পৃথিবীর উৎপন্ন তাপমাত্রার একটি বড় অংশ সমুদ্র শোষণ করে। বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করার ফলে সমুদ্রের পানির স্বাভাবিক ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যায়। সমুদ্রের পানিতে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ফেলার ফলে একদিকে যেমন সামুদ্রিক জীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে তেমনি সমুদ্রের পানি তার শোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সমুদ্রের পানিতে অতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, অর্থাৎ বেড়ে যায়।যার ফলশ্রুতিতে জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত হয়।
ঠ)যুদ্ধ
বিগত শতাব্দীতে দুইটি বিশ্বযুদ্ধ (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪- ১৯১৮ সালে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯-১৪৫ সালে) সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের মধ্যে বর্তমান সময় পর্যন্ত ছোট-বড় যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই রয়েছে। এসব যুদ্ধ-বিগ্রহে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডলের সাথে মিশে যায়। যা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত হয়।
ড)পারমাণবিক বিস্ফোরণ
পারমাণবিক শক্তির তেজস্ক্রিয়তা এতো বেশি যে,তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিরাজ করে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ বায়ুমণ্ডলে মিশে উত্তপ্ত করে ফেলে। যেমন-১৯৮৬ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার চেরণোবিল নামক স্থানে যে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে বায়ুমণ্ডল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।সমগ্র পৃথিবীতে এর প্রভাব পড়ে।মানবসৃষ্ট এই পারমাণবিক বিস্ফোরণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
ঢ)বৃক্ষ নিধন
ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধনের ফলে বায়ুমণ্ডলে উদ্বৃত্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয়,যা বায়ুমণ্ডলকে দ্রুত উষ্ণ করে তোলে। বনভূমির বাণিজ্যিক ব্যবহার, ইকোট্যুরিজম, বনভূমির উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভৃতির কারণে বৃক্ষ নিধন হয়ে থাকে। বৃক্ষ নিধন বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
শেষ কথা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে হবে অথবা কোন ভাবে এদের বায়ুমণ্ডল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। মিথেন গ্যাসকে বায়ুমণ্ডল থেকে সরানো যায় না। এর উৎপাদন বা নিঃসরণও বন্ধ করা কঠিন, কারণ এটি কৃষিকাজ থেকে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় প্রধান সুপারিশ হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানো। পেট্রোলিয়াম, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানো কমিয়ে তার বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (যেমন-সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ব্যবহার করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ কমে।বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমানোর জন্য আরেকটি উপায়ের কথা বলা হয়। তা হলো বেশি করে গাছ লাগানো। কারণ, গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে খাদ্য তৈরি করে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড কমে আসে। আজকের আর্টিকেলে জলবায়ু পরিবর্তন কী? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।