বান কী? বান সৃষ্টির জন্য অনুকূল অবস্থা বর্ণনা কর
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে বান কী? বান সৃষ্টির জন্য অনুকূল অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
কখনো কখনো জোয়ারের সময় খাড়া প্রাচীরের ন্যায় পানি রাশি উঁচু হয়ে তীরের দিকে আসে, তাকে বান বা জোয়ারের বান বলে।
ভূমিকা
জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানি উঁচু হয়ে মোহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে, ফলে নদীর পানিও তখন বৃদ্ধি পায়। এইভাবে জোয়ারের পানি নদীতে আসার সময় মাঝেমাঝে অত্যাধিক উঁচু (৫০৮ মিটার) হয়ে প্রবল বেগে নদীতে প্রবেশ করে। একে বান বলে।
আরো পড়ুন:জোয়ার-ভাটার কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর
কতগুলো বিশেষ অবস্থায় নদীতে বান খুব প্রবল হয়-(১) ভরা কটালের সময়, (২) নদীর মোহনা চড়া থাকলে, (৩) জোয়ারের পানি প্রবেশ করার সময় নদীর স্রোতে বা অন্যভাবে বাঁধা পেলে, (৪) নদীর মুখ ফানেলের ন্যায় হলে অর্থাৎ নদী মোহনা বেশ প্রশস্ত কিন্তু নদী খাত অপেক্ষাকৃত সরু এবং নদী পানি পূর্ণ থাকলে।
বান (Tidal Bore)
নদী ও নদী মোহনায় যে সকল প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে বান তার মধ্যে অন্যতম। নদীর স্রোত, গভীরতা, প্রশস্ততা প্রভৃতির উপর বানের গতি ও উচ্চতা নির্ভর করে। কখনো কখনো প্রবল বান যানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। জোয়ারের পানি নদীর মোহনা দিয়ে উঁচু প্রাচীরের মতো দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে তাকে বান বলে। অগভীর মহীসোপান, সংকীর্ণ মুখ, নদীর মুখে বালির বাঁধ, নদীর খরস্রোত প্রবাহ প্রভৃতি অবস্থা জোয়ারের পানিকে নদীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বাধার সৃষ্টি করে। বিধায় জোয়ারের পানি নদীর মুখে প্রবেশ করার সময় খুব উঁচু হয়ে প্রবল বেগে অগ্রসর হয়ে বানের সৃষ্টি করে।
আরো পড়ুন:জোয়ার-ভাটার শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা কর
বান সৃষ্টির জন্য নদীর অনুকূল অবস্থা
নদীতে বান সৃষ্টি হতে হলে যে সকল অনুকূল অবস্থা নদী ও নদী মোহনায় বিরাজ করতে হয় তা নিম্নরূপ:
১) সাধারণত যে সব নদীর মোহনা সংকীর্ণ থাকে সেই সব নদীতে বান ডাকে।
২) নদীর মোহনা অগভীর হলে সাধারণত বান প্রবল হয়।
৩) বান সৃষ্টির জন্য নদীর নাব্যতা থাকতে হবে। শুষ্ক বা মরা নদীতে বান ডাকে না।
৪) সাধারণত অপ্রশস্ত নদীর বান প্রবল হয় এবং প্রশস্ত নদীর বান প্রবল হয় না।
৫) নদীর মোহনায় সমুদ্র হতে স্থলভাগের দিকে প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হলে বড় ধরনের বানের সৃষ্টি হতে পারে।
৬) নদীতে জোয়ারের সময় বান ডাকে, ভাটার সময় নয়।
৭) সুনামী, হারিকেন, টর্নেডো প্রভৃতি দ্বারা নদী মোহনা সংলগ্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হলে নদীতে বান ডাকতে পারে।
৮) বর্ষাকালে নদী-পানি দ্বারা পূর্ণ থাকে সেই জন্য এই সময় বান ডাকার উপযুক্ত সময়।
বানের উচ্চতা
বান সাধারণত ১/২ মিটার থেকে ৩/৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত আষাঢ়,শ্রাবণ,ভাদ্র মাসে নদী ভরা থাকে। আর এই সময় নদীতে যে বান ডাকে তা সব চেয়ে উঁচু হতে দেখা যায়।ভাগীরথী নদীতে বর্ষাকালে যে বান ডাকে তার উচ্চতা প্রায় ৪-৫ মিটার।
প্রবল বান ডাকা নদীসমূহ
বর্ষার মৌসুমে অনেক নদীতে বান ডাকলেও সব নদীতে বান প্রবল হয় না।মেঘনা,ভাগীরথী,সারন,সেন, আমাজান, ইয়াং সিকিয়াং,সেভার্ল প্রভৃতি নদীর বান অতি প্রবল।
বানের প্রভাব
বান একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।বানের সামনে পড়লে নৌকা, লঞ্চ, ট্রলার প্রভৃতি ডুবে যেতে পারে। এছাড়াও প্রবল বানের প্রকোপে নদীর বাঁধ বা তীর ধ্বসে যেতে পারে।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,জোয়ারের সময় সমুদ্র স্ফীত হয় বলে সমুদ্রের পানি মোহনা দিয়ে দ্রুত নদীতে প্রবেশ করে, যার ফলে নদীর পানি তখন দ্রুত বেড়ে যায়। আর এভাবেই জোয়ারের পানি নদীতে ঢোকার সময় মাঝে মাঝে অত্যাধিক উঁচু হয়ে প্রবল বেগে নদীতে জলোচ্ছ্বাস ঘটায়। আর একেই বলা হয় বান।নদীতে এই বান প্রবেশ করার সময় প্রবল গর্জনের মতো শোনায় বলে একে বান ডাকা বলা হয়। আজকের আর্টিকেলে বান কী? বান সৃষ্টির জন্য অনুকূল অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।