ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এবং মানব জীবনে এর প্রভাব বর্ণনা কর
প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন আজকের আর্টিকেলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এবং মানব জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ৩০°হতে ৪৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তে এ জলবায়ু বিস্তৃত। ভূমধ্যসাগর ও তার তীরবর্তী এলাকা সমূহে এ জলবায়ুর প্রভাব সর্বাধিক বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয়।
সংজ্ঞা
মহাদেশগুলোর পশ্চিমাংশে ৩০°হতে ৪৫°উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে যে এক প্রকার জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায় তাকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগর এবং এর তীরবর্তী দেশ সমূহে এ জলবায়ুর বিস্তৃতি ও প্রভাব সর্বাধিক বলে উপক্রান্তীয় মহাদেশের পশ্চিম প্রান্তের এ জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলা হয়।এছাড়া শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র শীতকাল এ জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
অঞ্চল ও দেশসমূহ
ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সের দক্ষিণাংশ, ইতালির পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণাংশ, যুগোশ্লাভিয়ার পশ্চিমাংশ, আলবেনিয়া ও গ্রিসের পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণাংশ, তুরস্কের পশ্চিমাংশ, ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী দ্বীপসমূহ, ইসরাইল, সিরিয়ার পশ্চিমাংশ এবং লিবিয়া, তিউনিশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশ,দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ- পূর্ব অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের উত্তর দ্বীপে এই ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য
সামগ্রিকভাবে এ অঞ্চলের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মৃদু উষ্ণ ও মৃদু শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। আর প্রধান জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যাদি নিম্নরূপ:
১) সূর্যের উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে ঋতু পরিবর্তন;
২) শুষ্ক আয়ন বায়ুর প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৃদুভাবাপন্ন গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র প্রত্যায়ন বায়ুর প্রভাবে স্বল্পকালীন আর্দ্র শীতকাল;
৩) ব্যাপকভিত্তিক বৃষ্টিপাত যুক্ত বর্ষাকাল নাই;
৪) শীত-গ্রীষ্ম ও দিন-রাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্য ব্যাপক;
৫) শরৎকালে সর্বাধিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর উপাদান ভিত্তিক বৈশিষ্ট্য
শীত-গ্রীষ্ম ও দিবারাত্রির তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্য, মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ এবং রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া, বৃষ্টিবহুল শীতকাল এবং বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল প্রভৃতি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। বায়ুর তাপ, বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির দ্বারা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নিরূপন করা হয়।ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নরূপ
(ক) তাপমাত্রা
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২১°-২৭°সেলসিয়াস (৭০°-৮০°ফা:) এবং শীতকালে তাপমাত্রা ৪°সেলসিয়াস হতে ১০°(৪০°-৫০°ফা:) পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলে গ্রীষ্মকাল ও শীতের উত্তাপের পার্থক্য গড়ে প্রায় ১.১ সেলসিয়াস (৩০°ফা:)।
গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা
গ্রীষ্মকালের মেঘযুক্ত আকাশ, শুষ্ক বায়ু এবং সূর্যের প্রায় উলম্ব অবস্থানের জন্য বায়ুর তাপমাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। গ্রীষ্মকালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় রাত্রিতে তাপ সহজেই বিকিরণ হতে পারে। এতে রাত্রে তাপ খুব দ্রুত হ্রাস পায়।ফলে এ ঋতুতে দিবারাত্রির তাপমাত্রা ব্যবধান খুব বেশি হয়।
শীতকালীন তাপমাত্রা
মৃদুভাবাপন্ন শীত ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া শীত কালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।এছাড়া শীতকালীন গড় তাপমাত্রা ৪° সেলসিয়াস হতে ১০°সেলসিয়াস এর মত হয়। উপকূল অঞ্চলে তাপমাত্রা কিছু বেশি থাকে। শীতকালের তিন মাসের মধ্যে কোন কোন রাত্রিতে আকষ্মিকভাবে তুহিন পাত হতে পারে। তবে তুহিনের ব্যাপকতা খুব কম।কোন রাত্রিতে বায়ুর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে গেলেও পরের দিন তা হিমাঙ্কের বহু উপরে উঠে যায়। অর্থাৎ শীতকালীন রাত্রিতে কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে।
খ) বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ
উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণ হলে সূর্য কর্কটক্রান্তির নিকটবর্তী হয় তখন পৃথিবীর বায়ু চাপ বলয়গুলো উত্তর দিকে সরে যায়। চাপ বলয়ের সঙ্গে সঙ্গে বায়ু বলয়গুলো উত্তরে সরে অবস্থান করে। ফলে এ সময় উত্তর গোলার্ধের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের দেশগুলোর উপর দিয়ে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু বহিতে থাকে। এ বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে আসে বলে এতে জলীয়বাষ্প থাকে না। ফলে এ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হয় না। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল থাকায় এবং বায়ু বলয়গুলো কিছু দূর উত্তরে সরে যাওয়ার ফলে সেখানকার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে প্রত্যায়ন বায়ু বইতে থাকে।এ বায়ু সমুদ্র হতে আসে বলে তাতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে এবং ঐ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
শীতকালে সূর্যের দক্ষিণায়ন হলে সূর্য যখন মকর ক্রান্তির নিকটবর্তী হয় তখন পৃথিবীর বায়ু চাপ বলয় গুলো দক্ষিণে সরে যায়। এর ফলে উত্তর গোলার্ধের ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর উপর দিয়ে প্রত্যায়ন বায়ু বইতে থাকে। এ বায়ু সমুদ্র হতে আসে বলে প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলো শুষ্ক আয়ন বায়ুর অধীনে থাকে এবং তথায় বৃষ্টিপাত হয় না। এ কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে শীতকালে প্রত্যয়ন বায়ু এবং গ্রীষ্মকালে শুষ্ক আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়।
(গ) বৃষ্টিপাত
বৃষ্টিবহুল শীতকাল ও বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। বৎসরের অধিকাংশ দিন আকাশ মেঘ যুক্ত থাকে এবং উজ্জ্বল সূর্যকিরণ পাওয়া যায়। তাই রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
(ঘ) স্বাভাবিক উদ্ভিজ্জ
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর যেখানে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা অধিক, সেসব অঞ্চলে চিরহরিৎ পাইন, সিডর, কর্ক জাতীয় বৃক্ষ জন্মে।অস্ট্রেলিয়াতে এ ধরনের জলবায়ুতে প্রচুর ইউক্যালিপটাস গাছ দেখা যায়। শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও আর্দ্র শীতকাল এরূপ জলবায়ুর কারণে উদ্ভিদকূল শুষ্কতার মোকাবেলা করতে সক্ষম। এছাড়া প্রতিকূল আবহাওয়ায় ছোট ছোট গাছ, ঝোপঝাড়, কাটা গাছ বেশি প্রাধান্য পায়। এ অঞ্চলে জলপাই, আঙ্গুর, কমলা, মিষ্টি বাদাম প্রভৃতি ফল চাষ হয়। আর এ অঞ্চলের গাছগুলোর মূল লম্বা, পানি ধরে রাখার জন্য মূলে শক্ত আবরণ ও তৈলাক্ত পাতা থাকে।
(ঙ) জীবজন্তু
এ অঞ্চলে নিবিড় বনভূমি বা তৃণভূমির পরিমাণ কম। সেজন্য হিংস্র জীবজন্তু বা তৃণভোজী প্রাণী তেমন দেখা যায় না। দুম্বা, খচ্চর,গাধা, ভেড়া, ঘোড়া, মেষ প্রভৃতি গৃহপালিত জীবজন্তু রয়েছে।এদের থেকে প্রাপ্ত গোশত, চামড়া, লোম প্রভৃতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
১) ভূ-প্রকৃতি
এ জলবায়ু অঞ্চলে সমভূমির তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলের আধিক্য রয়েছে, যেমন- ইতালির অ্যাপেনাইন, স্পেনের সিয়েরা নেভেদা, মরক্কো ও আলজেরিয়ার অ্যাটলাস পর্বত মালা, তুরস্কের তোরাস প্রভৃতি। উপকূল এলাকায় অপ্রশস্ত সমভূমি দেখা যায়।
২) মৃত্তিকা
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে জৈব উপাদান যুক্ত ভারি দোআঁশ, হালকা বালি মিশ্রিত কাদামাটি ও কালো বর্ণের শোরনোজেম ও চুনাপাথর জাত মৃত্তিকা দেখা যায় যা গম চাষ ও ফল চাষের উপযুক্ত।
৩) খনিজ সম্পদ
এ অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। খনিজ তেল, কয়লা, লৌহ আকরিক, সীসা, দস্তা, গন্ধক,মার্বেল, স্বর্ণ প্রভৃতি এতদাঞ্চলের প্রধান প্রধান খনিজ।
মানব জীবনে এর প্রভাব বা গুরুত্ব
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু উক্ত অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকে। নিম্নে মানব জীবনে এর প্রভাব বর্ণিত হলো:
১) কৃষিকার্য
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বিস্তৃত সমতল ভূমির অভাব রয়েছে। শীতকালের স্বল্প বৃষ্টি এবং নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু প্রকৃতির জন্য নদী অববাহিকা,অপ্রশস্ত সমতল ভূমি ও পার্বত্য ঢালে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিকার্য চলে। এ অঞ্চলে খাদ্যশস্য হিসেবে গম, জব, ভুট্টা কিছু ধান এবং অর্থকরী ফসলের মধ্যে তুলা, তু্ঁত গাছ, বীট ইত্যাদি চাষাবাদ হয়। ব্যতিক্রম ধর্মী জলবায়ুর কারণে প্রচুর পরিমাণে শুকনা ও রসালো ফল উৎপাদন হয়, যেমন-আঙ্গুর, বেদানা, মাল্টা,কমলালেবু,লেবু, আপেল, নাশপাতি, বাদাম, ডুমুর, জলপাই ইত্যাদি। আর এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফলের বাগান রয়েছে। বৈচিত্র্যময় ফল উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চলকে 'ফলের ঝুড়ি' বলা হয়।
২) বনজ সম্পদ আহরণ
বৃক্ষ, ফল ও ফুল প্রভৃতি বনজ সম্পদ সংগ্রহ এবং ক্রয় বিক্রয় করে অনেক লোক জীবিকা নির্বাহ করে।মানুষের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র বনজ সম্পদ হতে প্রস্তুত হয়। এ অঞ্চলে কাগজ, দিয়াশলাই, কাঠ শিল্প প্রসিদ্ধ। এখান থেকে কাঠ ও কাঠ জাত দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানি হয়।
৩) খনিজ সম্পদ উত্তোলন
অনুকূল জলবায়ু অধিবাসীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। ফলে সহজে অধিবাসীরা খনিজ সম্পদ আহরণ ও ক্রয়-বিক্রয় এবং রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটায়।
৪) মৎস্য শিল্প
ক্যালিফোর্নিয়া, চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল ও ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশগুলোর অনেক লোক মৎস্য স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
৫) পশু পালন
বিস্তৃত তৃণভূমি না থাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পশু পালন কম হয়।এছাড়া অপেক্ষাকৃত বৃষ্টিবহুল এলাকায় খামার পদ্ধতিতে পশুপালন হয়।গৃহপালিত পশুগুলো ভারবহনে খাবার জন্য গোশত উৎপাদনে, চামড়া ও লোমের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
৬) শিল্প
এ অঞ্চলে ধাতব খনিজ নির্ভর ভারী ও কৃষি নির্ভর শিল্প বিকশিত হয়েছে। অনুকূল জলবায়ুর কারণে শ্রমিকের কর্মদক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ভারী শিল্পের মধ্যে লৌহ ও ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণ,তৈল শোধন শিল্প বেশ উল্লেখযোগ্য।এছাড়া কুটির শিল্প ও কৃষি পণ্য নির্ভর শিল্পের মধ্যে বয়ন শিল্প, ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, মদ তৈরি, জলপাই তেল প্রস্তুতকরণ, রেশম, পশম, গালিচা, সাবান প্রভৃতি অন্যতম।
আরো পড়ুন:জোয়ার-ভাটার শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা কর
ফ্রান্স,স্পেন ও ইতালি পৃথিবীর প্রায় ৬৫% মদ উৎপাদন করে। ফ্রান্স, পর্তুগাল, মরক্কো ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া শিল্পোন্নত দেশ। সূর্যকরোজ্জ্বল মেঘমুক্ত আকাশ চিত্র গ্রহণের জন্য বিশেষ সহায়ক। এ অঞ্চলে মনোরম আবহাওয়া, সমুদ্র সান্নিধ্য,প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউড, ফ্রান্স ও ইতালীতে চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠেছে।
৭) পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা
এ অঞ্চলের দেশগুলোর জলপথ, সড়ক, রেল ও বিমান পথ বেশ উন্নত। মূল অঞ্চলে সুয়েজ খালের মাধ্যমে স্বল্প খরচে, অল্প সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।আর বিশ্বের অনেক উল্লেখযোগ্য সমুদ্র বন্দর এ অঞ্চলে অবস্থিত।
৮) ব্যবসা-বাণিজ্য
সমুদ্র প্রান্তীয়, উপদ্বৈপ,দ্বৈপ অবস্থান ও পরিবহন মাধ্যম গুলো উন্নত হওয়ায় এ অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য সমৃদ্ধি লাভ করেছে। সুয়েজ খাল পথ, উত্তর আটলান্টিক সমুদ্র পথ বাণিজ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৯) অধিবাসী ও জনবসতি
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে অত্যন্ত মনোরম জলবায়ু উর্বর মৃত্তিকা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বৈচিত্র্যময় অর্থনৈতিক কাজের সুযোগ প্রভৃতি কারণে ঘন জনবসতি লক্ষ্য করা যায়। নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে অধিকাংশ মানুষ ককেশয়েড।তবে নিগ্রো গোষ্ঠীর অভিগমন হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
১০) মানসিক অবস্থা ও সভ্যতা
এ অঞ্চলের মানুষেরা কর্মতৎপর, অধ্যবসায়ী, ধৈর্যশীল, বলিষ্ঠ ও কর্মনিপুণ। অধিবাসীরা অনেক আগে থেকেই জ্ঞান ও সভ্যতায় অনেক উন্নত। এরা কাব্য, সাহিত্য ও কলাবিদ্যায় উন্নত।রোম,কার্থেজ,গ্রীস ও মিশরীয় সভ্যতা এই জলবায়ু অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল।
১১) বাসগৃহ
বাসগৃহ নির্মাণ পদ্ধতি জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এ অঞ্চলের পল্লীতে পাথরের দেয়াল, দালান কোঠা দেখা যায়। তুষারপাত এলাকায় গৃহের ছাদ ঢালু হয়।
১২) খাদ্য ও বস্ত্র
গম উৎপাদন বেশি হওয়ায় অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য গম ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত খাদ্যদ্রব্য। শীতের প্রকোপ একটু বেশি হওয়ায় পশম বস্ত্রই অধিক ব্যবহৃত হয়।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,বৃষ্টিবহুল শীতকাল বৃষ্টিহীন গ্রীষ্মকাল এবং প্রায় সারা বছর মেঘ মুক্ত আকাশ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আজকের আর্টিকেলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বৈশিষ্ট্য এবং মানব জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।