মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনা কর
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি যে আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী অর্থাৎ উপমেরু জলবায়ু ও মেরু অঞ্চলের চির বরফের আচ্ছাদনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তুন্দ্রা জলবায়ু অবস্থিত।উত্তর গোলার্ধে ৬৫°-৮০°ও দক্ষিণ গোলার্ধে ৮০°-৭৫°দক্ষিণ অক্ষাংশ বলয় এ জলবায়ুর অন্তর্গত।
মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল
উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের জলবায়ুকে মেরুদেশীয় জলবায়ু বলে। শীতের তীব্রতা ও অবস্থান অনুযায়ী এ জলবায়ু অঞ্চলকে দুই ভাগে পৃথক করা হয়। যেমন-
১) মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল
২) চির তুষারাবৃত মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল
(১)মেরুদেশীয় তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চল
অবস্থান
সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী স্থানে তুন্দ্রা অঞ্চল (বা তুন্দ্রা জাতীয় জলবায়ু) অবস্থিত। আর উত্তর গোলার্ধের নরওয়ে, সুইডেন, রাশিয়ার উত্তরাংশ (সাইবেরিয়াসহ), উত্তর কানাডা,আলাস্কা,গ্রীনল্যান্ড এবং দক্ষিণ গোলার্ধের এন্টার্কটিকা মহাদেশ তুন্দ্রা অঞ্চলের অন্তর্গত।
জলবায়ু
হিম শীতল জলবায়ু তুন্দ্রা অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।কারণ এ অঞ্চল প্রায় সারা বছর বরফাচ্ছন্ন থাকে। গ্রীষ্মকাল ক্ষণস্থায়ী এবং শীতকাল দীর্ঘস্থায়ী।গ্রীষ্মকালে সূর্য অস্ত যায় না এবং শীতকালে সূর্য খুব কমই উদিত হয়। আর শীতকালে দীর্ঘদিন উত্তাপ কম থাকায় বিরাট তুষার স্তুপ সঞ্চিত হয়। ক্ষণস্থায়ী গ্রীষ্মকালে এ তুষার অতি অল্পই গলে থাকে।
তাপমাত্রা
তুন্দ্রা জলবায়ুতে শীতকাল যেমন অতি দীর্ঘ তেমনি অতি শীতল এবং গ্রীষ্মকাল অতি সংক্ষিপ্ত ও শীতল। আর এ জলবায়ু অঞ্চলের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে। শীতলতম মাসের গড় তাপমাত্রা -৪০°সেলসিয়াস থেকে -২০°সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং উষ্ণতম মাসের গড় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪°-৫°সেলসিয়াস উপরে উঠে থাকে।
বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ
তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলের মহাদেশীয় ও সামুদ্রিক অবস্থানে ভিন্ন রকমের বায়ু সঞ্চালন বিদ্যমান।মহাদেশীয় অবস্থানে উচ্চ চাপ বিরাজ করে বলে বায়ুর গতিবেগ কম থাকে। বিশেষ করে শীতকালে উচ্চচাপ প্রবল হয়ে এসব অঞ্চলে শান্ত অবস্থার সৃষ্টি করে।
অপরদিকে মহাসমুদ্রের উপর বিশেষ করে উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্রের স্বল্প স্থায়ী কিন্তু প্রবল নিম্নচাপ জনিত ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ দেখা যায়।তুন্দ্রা অঞ্চলের সামুদ্রিক নিম্নচাপ জনিত ঘূর্ণিঝড়ের পরিপূর্ণ রূপ নিতে সময় লাগে মাত্র ১২-২৪ ঘন্টা এবং এদের আয়ু হল ৩৬-৪৮ ঘন্টা।ঘন্টায় ৪০-৫৫ কি.মি. বেগে এরা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
বৃষ্টিপাত
বায়ুর তাপমাত্রা অতি অল্প বলে তুন্দ্রা অঞ্চলের বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা থাকে খুবই কম। এ জলবায়ু অঞ্চলে গড় বার্ষিক বর্ষণের পরিমাণ হলো ৫-২৫ সে.মি. এবং এর তিন-চতুর্থাংশ সংঘটিত হয় গ্রীষ্মকালে। গ্রীষ্মকালে বর্ষণ হয় বৃষ্টির আকারে, তবে কখনো কখনো সিক্ত তুষারপাতও হয়ে থাকে।
উদ্ভিজ্জ
অতি প্রতিকূল জলবায়ুর জন্য তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে উদ্ভিজ্জ খুব কমই দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে যখন বরফ গলে যায় তখন শ্যাওলা, গুল্ম ও লাইকেন ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ জন্মায়। আবার শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এরা মরে যায় অথবা বরফে ঢেকে যায়। এ জলবায়ুর উপমেরু প্রান্তে কিছু খর্বকার বার্চ ও এলডার জাতীয় পতনশীল পত্র বিশিষ্ট গাছ জন্মে থাকে। তুন্দ্রা অঞ্চলের শ্যাওলা ও গুল্ম খাবার জন্য গ্রীষ্মকালে বল্গা হরিণের পাল এ অঞ্চলে এসে থাকে।
২)চির তুষারাবৃত মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল
উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের যে সমস্ত স্থান চিরদিনের জন্য গভীর বরফ স্তুপে আচ্ছন্ন থাকে তাকে চির তুষারাবৃত মেরুদেশীয় অঞ্চল বা উচ্চ ভূমি অঞ্চল বলা হয়।
অবস্থান
উত্তর গোলার্ধের গ্রীনল্যান্ড মালভূমির উচ্চাংশ ও সুমেরু বৃত্তের কেন্দ্রস্থল এবং দক্ষিণ গোলার্ধের এন্টার্কটিকা মহাদেশের প্রায় সমগ্র অংশ এ অঞ্চলের অন্তর্গত।
জলবায়ু
অতি দুর্গম বলে এ জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কমই জানা যায়। তাপমাত্রা বছরের কোন সময়ই হিমাঙ্কের ঊর্ধ্বে উঠে না এবং প্রচন্ড শীত অনুভূত হয়। তুষারপাতের দরুন এ অঞ্চল ঘন বরফে আবৃত থাকে। এখানকার সমুদ্রের উপরিভাগে বরফ জমে বিশাল সমভূমির রূপ ধারণ করে। ফলে এ অঞ্চলকে 'ভাসমান বরফের দেশ' বলা হয়।
আরো পড়ুন:জোয়ার-ভাটার শ্রেণীবিভাগ বর্ণনা কর
৬ মাস দিন ও ৬ মাস রাত্রি এ জলবায়ু অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে চিরায়ত বরফের জলবায়ুর তাপমাত্রা সম্পর্কে সামান্য তথ্য জানা গেলেও বর্ষণ সম্পর্কে বলতে গেলে কোন তথ্যই জানা যায় না। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্ষণ খুব কমই হয় এবং তা বরফের পাউডার আকারে পতিত হয়।
শেষ কথা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের জলবায়ুকে মেরুদেশীয় জলবায়ু বলে। সুতরাং আজকের আর্টিকেলে মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।