বাষ্পীভবন কাকে বলে-বাষ্পীভবনের নিয়ামক সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর।

প্রিয় পাঠক আপনারা কি জানেন বাষ্পীভবন কাকে বলে-বাষ্পীভবনের নিয়ামক সম্পর্কে।আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।কেননা আজকের আর্টিকেলে বাষ্পীভবন কাকে বলে-বাষ্পীভবনের নিয়ামক সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইলো।
বাষ্পীভবন কাকে বলে-বাষ্পীভবনের নিয়ামক সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর।
সাধারণভাবে বলতে গেলে বাষ্পীভবন বলতে বোঝায়, যে পদ্ধতিতে পানি তরল অবস্থা থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তাকেই বাষ্পীভবন বলে।

ভূমিকা

যখন পানিতে ভৌত অবস্থা তরল থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় উপনীত হয় তখন তা' বাষ্পীভবন হিসেবে পরিচিত।প্রতি গ্রাম পানিতে ৬০০ ক্যালোরি তাপশক্তি প্রয়োগ করলে পানি তরল থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।সৌর বিকিরণ, বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা,বাষ্পীয় চাপ,বায়ুপ্রবাহ এবং বায়ুমন্ডলের চাপ কোন অঞ্চলে বাষ্পীভবন নিয়ন্ত্রণ করে। মনুষ্য কর্মকাণ্ডও (বন পোড়ানো, কারখানা থেকে গ্যাস নিঃসরণ, বিস্ফোরন জনিত উত্তাপ) কোন কোন ক্ষেত্রে বাষ্পীভবনে অবদান রাখে। এছাড়াও বাষ্পীভূত পানি মহাসাগর, নদ-নদী, ভূমি, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থানে পতিত হয় এবং কিছুটা বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়।

বাষ্পীভবন কাকে বলে

বাষ্পীভবন হলো বিভিন্ন ভৌত প্রক্রিয়ার দ্বারা সমুদ্র,নদী ও অন্যান্য জলাশয়, ভূ-পৃষ্ঠ ও উদ্ভিদ থেকে পানি তরল অবস্থা থেকে বাষ্পে পরিণত হয়ে বায়ুমন্ডলে স্থানান্তরকে বাষ্পীভবন (Evaporation) বলে।এছাড়াও বায়ুমন্ডলে বাষ্পীভবনের শতকরা ৮৪ ভাগ আসে সমুদ্র থেকে এবং ১৬ ভাগ আসে অন্যান্য উৎস থেকে।বায়ুমন্ডলের বাষ্পীভবন শীতল ও ঘনীভূত হয়ে জলকণার আকার ধারণ করে অবশেষে বারিপাত ঘটায়।


সহজভাবে বলতে গেলে বাষ্পীভবন বলতে বোঝায়,তাপীয় শক্তির কারণে তরল পানি বাষ্পীয় অবস্থায় রূপান্তরকে বলা যায় বাষ্পীভবন অথবা যে পদ্ধতিতে পানি তরল অবস্থা থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তাই বাষ্পীভবন।আবার অন্যদিকে কঠিন বরফ হতে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় Sublimation বা ঊর্ধ্বপাতন দ্বারা বাষ্পীভবন। তবে বাষ্পীভবনের পরিমাণ, পানির গুনাগুন ও বায়ুমণ্ডলের অবস্থার উপর নির্ভর করে।

বাষ্পীভবনের নিয়ামক

বাষ্পীভবনের পরিমাণ যে সকল নিয়ামকের উপর নির্ভর করে তা নিম্নরূপ বর্ণিত হলো:

১)পানি পৃষ্ঠের বাষ্প চাপ: পানি পৃষ্টের তাপমাত্রা বায়ুর তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হলে পানি পৃষ্ঠের বাষ্প চাপ বেশি হয়। ফলে বাষ্পীভবনের হার বেশি হয়।

২) বায়ুর বাষ্প চাপ: বায়ুর বাষ্প চাপ বেশি হলে বাষ্পীভবনের হার কমে যায়।

৩) বায়ু প্রবাহ: ঘূর্ণি বায়ুপ্রবাহ অধিক বাষ্পীভবনের অনুকূল।কেননা ঘূর্ণি বায়ু জলীয়বাষ্প পূর্ণ বায়ুকে সরিয়ে শুষ্ক বায়ুকে জলীয়বাষ্প গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

৪) দিনের দৈর্ঘ্য: দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হলে বাষ্পীভবনের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

৫) উদ্ভিজ্জের ধরন: বড় পাতাযুক্ত ঘন বনাঞ্চল বাস্পীভবনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৬) মৃত্তিকার আর্দ্রতা: আর্দ্র মৃত্তিকা থেকে বেশি হারে বাষ্পীভবন ঘটে।

৭) বায়ুর তাপমাত্রা: বায়ুর তাপমাত্রা বাড়লে বাষ্পীভবন বাড়বে।

৮) সৌর বিকিরণ: সৌর বিকিরণ বাড়লে বাষ্পীভবন বাড়বে।

৯) বাষ্পীয় চাপ: বায়ু ও পানির বাষ্পীয় চাপের পার্থক্য থাকলে বাষ্পীভবনের তারতম্য হবে।

১০) বায়ুর বেগ: বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পেলে বাষ্পীভবনও বৃদ্ধি পাবে।

১১) বায়ুমণ্ডলীয় চাপ: বায়ুমন্ডলীয় চাপ হ্রাস পেলে অথবা উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাষ্পীভবন বাড়বে।

১২) পানির লবণাক্ততা: পানি লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে বাষ্পীভবন কমে যাবে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় লবণাক্ত পানির উপর নিম্ন বাষ্পীয় চাপের কারণে বাষ্পীভবন কমে যায়।

সংক্ষেপে বলা যায়, সৌর বিকিরণ ও তাপমাত্রা বেশি হলে বাষ্পীভবনের মাত্রা বেড়ে যায়। আবার বায়ুর বেগ ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বাড়লেও বাষ্পীভবন বাড়ে।তবে কোনো কারণে পানির লবণাক্ততা বেড়ে গেলে বাষ্পীভবন কমে যায়।এ কারণে দেখা যায় লবণাক্ত হ্রদ থেকে বাষ্পীভবনের মাত্রা কম।বাষ্পীভবন হয়ে থাকে জলধার, প্রবাহমান জলধারা, আবদ্ধ জলাশয়, হ্রদ, বিল বা হাওর, সমুদ্র এমনকি আর্দ্র মৃত্তিকা হতে। এক্ষেত্রে কোন অঞ্চলের বাষ্পীভবনকে নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়,

E=I+P -O-Ogw+(S1-S2)

যেখানে,

E=বাষ্পীভবন (Evaporation)

I=অন্ত:প্রবাহ (inflow)

P= বারিপাত (Precipitation)

O= বর্হি প্রবাহ (Outflow)

Ogw= ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রবাহ

S1= নির্দিষ্ট সময়ে পানির মজুদ;

S2= সময় শেষে পানির মজুদ;

উপরোক্ত পদ্ধতিতে বাষ্পীভবন নির্ণয় করাকে পানি বাজেট পদ্ধতি (water budjet method)বলা হয়।

বাষ্পীভবনের বন্টন

বাষ্পীভবনের বন্টন তাপমাত্রা, সম্ভাব্য বাষ্পীভবন, জলাধারের পর্যাপ্ততা এবং বাষ্পীয় প্রশাসনের সমন্বয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।যেহেতু নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে তাপমাত্রা কমতে থাকে সেক্ষেত্রে বাষ্পী- ভবনের পরিমাণও নিরক্ষীয় রেখা থেকে মেরুর দিকে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়।সম্ভাব্য বাষ্পীভবনের পরিমাণ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সমুদ্র ভাগের উপর বেশি হয়ে থাকে।


ভূপৃষ্ঠে যেই স্থানে আবদ্ধ ও প্রবাহমান পানির পরিমাণ বেশি অর্থাৎ যেটি আর্দ্র স্থান বা নদীমাতৃক এলাকা হিসেবে বিবেচিত সেখানে বাষ্পীভবন বেশি হয়।এছাড়াও দেখা যায় যে,যেখানে অরণ্যের আচ্ছাদন বেশি সেখানে বাষ্পীভবন থেকে বাষ্পীয় প্রস্বেদন বেশি হয়।


নিরক্ষীয় অঞ্চলে ঘন অরণ্য থাকায় সেখানে বাষ্পীয় প্রস্বেদনের মাত্রা বেশি। G.T. Trewartha 'র মতে, বিশ্বের ৬০% বাষ্পীভবন ২০° উত্তর থেকে ২০°দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে এবং ৮০% বাষ্পীভবন ৩৫° উত্তর থেকে ৩৫°দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে।দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি হওয়াতে বাষ্পীভবনের মাত্রা গড়ে উত্তর গোলার্ধের চেয়ে কিছু বেশি।

শেষ কথা

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, বাষ্পীভবন বলতে বোঝায় সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, হ্রদ প্রভৃতি হতে পানি ক্রমাগত বাষ্পে পরিণত হচ্ছে এবং তা অপেক্ষাকৃত লঘুতর বলে ঊর্ধ্বে উঠে বায়ুমন্ডলে মিশে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে,একেই বাস্পীভবন বলে। এবং সহজভাবে বলা যায়,যে পদ্ধতিতে পানি তরল অবস্থা থেকে বাষ্পীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তাকে বাষ্পীভবন বলে।আজকের আর্টিকেলে বাষ্পীভবন কাকে বলে-বাষ্পীভবনের নিয়ামক সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url