বাংলাদেশের বনজ সম্পদের বন্টন ও গুরুত্ব আলোচনা কর
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের বনজ সম্পদের বন্টন ও গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল। আশাকরি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।
বনজ সম্পদ প্রকৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দান। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। সংরক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটি ও জনসাধারণের উদাসীনতার কারণে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
ভূমিকা
যেসব স্থানে ছোট,মাঝারি,বড় ইত্যাদি অসংখ্য প্রকারের বৃক্ষ একত্রে পাওয়া যায় তাকে বনভূমি বলে অভিহিত করা হয়। আর বনভূমিতে উৎপাদিত বা প্রাপ্ত যাবতীয় উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ সম্পদকে বনজ সম্পদ বলা হয়।বনজ সম্পদ প্রকৃতির একটি উল্লেখযোগ্য দান।কিন্তু সংরক্ষণ ব্যবস্থার ত্রুটি ও জনসাধারণের উদাসীনতার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। খনিজ সম্পদের মতো বনজ সম্পদ সীমাবদ্ধ নয় বলে মানুষ ইচ্ছা করলেই মানুষ সম্পদ বাড়াতে পারে।
বাংলাদেশের বনজ সম্পদের বন্টন
বাংলাদেশের বনভূমি থেকে বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। এদেশে বনভূমির আয়তন অত্যন্ত কম হওয়ায় প্রাপ্ত বনজ সম্পদের পরিমাণও কম।২০০৪-০৫ অর্থবছরে এদেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল ২৫,৯৮২ বর্গ কিলোমিটার যা মোট ভূখণ্ডের ১৭.৫১%। বাংলাদেশের বনজ সম্পদের বন্টন নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১/কাঠ
বনভূমি থেকে প্রাপ্ত শাল,সেগুন,মেহগনি, গামারি,শিশু, চাপালিশ, গর্জন, গজারি ইত্যাদি গাছ থেকে ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য কাঠ সংগ্রহ করা হয়। আর বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়ালের বনভূমিতে প্রচুর শাল কাঠ ও গজারি কাঠ পাওয়া যায়।রংপুর ও দিনাজপুরের বনভূমিতে প্রচুর পরিমাণ শাল কাঠ পাওয়া যায়।এদেশে দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব দিকের পাহাড়ি এলাকার ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পতনশীল পত্রযুক্ত বনভূমিতেও প্রচুর কাঠ পাওয়া যায়।
২০০৩-০৪ অর্থ বছরে এদেশের বনভূমি থেকে ৬,৫৪৫.১৬ ঘনফুট কাঠ উৎপাদিত হয়।FAO -এর তথ্যানুসারে ২০০৪ সালে এদেশের 'স' মিলে ব্যবহৃত ৩৮৮ হাজার ঘনমিটার কাঠ অভ্যন্তরীণ বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কাঠজাত আসবাবপত্র তৈরিতে ৯ হাজার ঘনমিটার কাঠ সংগ্রহ করা হয়।
২/জ্বালানি কাঠ
জ্বালানি কাঠ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বনজ সম্পদ। এদেশের বনভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়। ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি, ক্রান্তীয় চিরহরিৎ ও পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি থেকেও প্রচুর জ্বালানি কাঠ আহরণ করা হয়। এদেশের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ভোলা জেলায় প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি কাঠ পাওয়া যায়।
২০০৩-০৪ অর্থবছরে এসব বন থেকে ৫,০৩৫.১০ হাজার ঘনফুট জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা হয়।FAO-এর রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪ সালে এদেশে ২৭,৬৯৪ ঘন মিটার জ্বালানি কাঠ উৎপাদিত হয় যার সম্পূর্ণ অংশই অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩/গোলপাতা
গোলপাতা বাংলাদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বনজ সম্পদ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত স্রোতজ বনভূমিতে প্রচুর গোলপাতা পাওয়া যায়। গোলপাতা উৎপাদিত জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী। গোলপাতা ঘরবাড়ি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তবে জ্বালানির তুলনায় গোলপাতা ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহারই অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি লাভজনক। ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে গোলপাতা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৯.৪৮ হাজার মেট্রিক টন।এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ বনজ সম্পদটির উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সরকার ও জনসাধারণের আরো যত্নবান হওয়া উচিত।
৪/বাঁশ
বাঁশ বাংলাদেশের অন্যতম বনজ সম্পদ।ঘরবাড়ি নির্মাণ ও শিল্প-কারখানার কাঁচামাল হিসেবে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।এদেশের প্রায় প্রত্যেক জেলাতেই বাঁশ উৎপাদিত হয়। পরিবহন শিল্পের ক্ষেত্রেও বাঁশের বহুল ব্যবহার রয়েছে।২০০৩-০৪ অর্থবছরে বাঁশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৪,৩৪৩.৯৯ হাজার।এদেশে বাঁশ উৎপাদনের প্রধান জেলাগুলো হলো সিলেট,রাঙামাটি,চট্টগ্রাম,খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, নোয়াখালী ইত্যাদি। চট্টগ্রাম ও তার আশপাশের জেলাগুলোতে অধিক পরিমাণে বাঁশ উৎপাদিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রামে কর্ণফুলি পেপার মিল গড়ে উঠেছে।
৫/শণ
শণ বাংলাদেশের অন্যতম বনজ সম্পদ। গোলপাতার মতোই এটি বাড়িঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হয়।এর দ্বারা ঘরের ছাউনি ও বেড়া প্রস্তুত করা যায়।কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো জ্বালানির কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদেশের অধিকাংশ জেলাতেই শণ উৎপাদিত হয়। তবে নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম জেলায় অধিক পরিমাণ শণ উৎপাদিত হয়।
৬/মধু
মধু বাংলাদেশের আরেকটি বনজ সম্পদ। এদেশের সুন্দরবনে অধিক পরিমাণে মধু উৎপাদিত হয়ে থাকে। মধু খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরেও এদেশ স্বল্প পরিমাণ মধু রপ্তানি করে থাকে। তবে কৃত্রিমভাবে যুব উন্নয়নের লক্ষ্যে আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প হিসেবে মৌ চাষ জোরদার করলে এর উৎপাদন আরো বাড়বে এবং সেই সাথে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনও বৃদ্ধি পাবে।
৭/মাছ
প্রাণিজ সম্পদের মধ্যে মাছ বাংলাদেশের অন্যতম বনজ সম্পদ হিসেবে পরিচিত।এদেশের বনভূমি গুলোতে প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে। বনভূমির লেকে, ডোবায় এবং নদী ও সাগর উপকূলীয় বনভূমি এলাকাতে এসব মাছ উৎপাদিত হয়ে থাকে।
৮/শিল্পে ব্যবহৃত কাঠ
শিল্পে ব্যবহৃত কাঠসমূহ বনজ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।শিল্পের উপকরণ ও কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাঠ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।বিভিন্ন ধরনের ফাইবার, দিয়াশলাই ও পরিবহন শিল্পে বনের কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৯/কাগজের মণ্ড
কাগজ তৈরির প্রয়োজনীয় মণ্ড বনজ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করা হয়।বনজ কাঠ ও কাঠ জাত দ্রব্যগুলো দ্বারা প্রথমে মণ্ড তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে কাগজের মণ্ড থেকে কাগজ উৎপাদন করা হয়। FAO-এর রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪ সালে এদেশের বনজ কাঠের মাধ্যমে ১৯ হাজার মেট্রিক টন কাগজের মণ্ড উৎপাদিত হয়।
১০/কাগজ ও বোর্ড
বনের কাঠ দ্বারা কাগজ ও বিভিন্ন ধরনের বোর্ড প্রস্তুত করা হয়। কাগজ ও বোর্ড শিল্পের কাঁচামাল হল বনের কাঠ ও বনজ সম্পদ।FAO-এর রিপোর্ট অনুসারে ২০০৪ সালে বাংলাদেশে কাগজ ও বোর্ড উৎপাদিত হয় ৪৬ হাজার মেট্রিক টন।
১১/বৃক্ষ
বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ ও উদ্ভিদ জন্মে। ভাওয়াল ও মধুপুরের বনভূমির প্রধান বৃক্ষ শাল ও গজারি।এছাড়া এ বনাঞ্চলে বিভিন্ন গাছ যেমন- ছাতিম,কড়ই,কেলিকদম্ব, হরীতকী, বহেড়া, হিজল,কুম্ভী,নিম,শিরীষ,ঝিকা প্রভৃতি মূল্যবান বৃক্ষ জন্মে থাকে। পাহাড়ি বনাঞ্চল গুলোতে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ জন্মে।পাহাড়ি চিরহরিৎ বৃক্ষগুলোর মধ্যে চাপালিশ,তেলসুর, ময়না ইত্যাদি প্রধান।তাছাড়া এ বনাঞ্চলে ছাতিম, পিটারি, আমলকি, চম্পা, জলপাই, কদম, ইত্যাদি ধরনের বৃক্ষ দেখা যায়।গরান বা স্রোতজ বনাঞ্চলে সুন্দরি, গরান, বীনা, গেওয়া, ধুন্দল,পশুর, কেওড়া,ওড়া, আমুর ও গোলপাতা ইত্যাদি বৃক্ষ প্রচুর জন্মে।
১২/বেত
বাংলাদেশের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমিতে উৎকৃষ্ট শ্রেণীর বেত পাওয়া যায়। সিলেটের কাগজ কারখানাটিতে এ বনভূমি থেকে কাঁচামাল হিসেবে প্রচুর বেত সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া বর্তমানে বেতের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র সৌখিন মানুষের গৃহে শোভা বর্ধন করছে।
১৩/বন্যপ্রাণী
বাংলাদেশের বনাঞ্চল গুলোতে অনেক বন্যপ্রাণী বাস করে। এগুলোও বনজ সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। এদেশের বনাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতের হরিণ, বানর, বাঘ,সাপ, বন্যকুকুর, চিতাবাঘ, হাতি, বাইসন ইত্যাদি বন্যপ্রাণী রয়েছে।
১৪/পাখি
বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বহু পাখি বাস করে।এসব পাখির মধ্যে বনমোরগ,ময়ূর ও অন্যান্য বন্যপাখি প্রধান। বিভিন্ন ধরনের দেশীয় জাতের পাখি বনাঞ্চলগুলোতে রয়েছে।
বাংলাদেশের বনজ সম্পদের গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মোট জাতীয় আয়ে বনজ সম্পদের অবদান ছিল ১. ৭৯ এবং ২০০৬-২০০৭ (সাময়িক) অর্থবছরে দেশের মোট জাতীয় আয়ে বনজ সম্পদের অবদান ধরা হয়েছে ১.৭৬%। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বনজ সম্পদের গুরুত্ব/ভূমিকা আলোচনা করা হলো:
১)নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যোগান
বাংলাদেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর যোগান নিশ্চিতকরণে বনজ সম্পদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এদেশের বন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন-জ্বালানি কাঠ, বাঁশ, ফলমূল, মাংস, মধু, মোম ইত্যাদি পাওয়া যায়।
২) আসবাবপত্র ও গৃহনির্মাণ
বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র যেমন- চেয়ার, টেবিল, আলমারি, খাট-পালঙ্ক প্রভৃতি তৈরি করতে কাঠ ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া গৃহনির্মাণের জন্য বন থেকে কাঠ, বাঁশ, বেত,শণ, গোলপাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়।বেত দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র অনেকের ঘরেই শোভা পায়।
৩) কৃষি উন্নয়ন
বনজ বৃক্ষের পাতা পচিয়ে সবুজ সার উৎপাদন করে জমিতে প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়।তাছাড়া বনজ সম্পদ দ্বারা কৃষির বিভিন্ন উপকরণ যেমন-লাঙল, মই ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
৪) শিল্পোন্নয়ন
বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে বনজ সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।শিল্পের সর্বাধিক কাঁচামালের যোগান আসে বন থেকে।কাগজ, রাবার,হার্ডবোর্ড, দিয়াশলাই,স্পিরিট, ওষুধ ইত্যাদি প্রস্তুতে বনজ সম্পদ অত্যাবশ্যক।
৫) রাজস্ব আয় বৃদ্ধি
বনজ সম্পদের উপর কর এবং ভ্রমণকারীদের উপর আরোপিত কর থেকে সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া বনজ সম্পদ বিক্রয় করেও সরকার প্রচুর রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে।
৬) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
বনজ সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের অনেক মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত যেমন-বনভূমি এলাকার অনেক মানুষ গাছপালা, গোলপাতা, মধু, মোম, ফলমূল ইত্যাদি সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সুতরাং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে বনজ সম্পদ এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
৭) পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন
বাংলাদেশের বনভূমির সৌন্দর্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তবে বিশেষ করে সুন্দরবনের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এখানে আসে। এতে পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়।
৮) ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে
ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে বনভূমির গুরুত্ব অধিক। কারণ কবিরাজি, হেকিমি, আয়ুর্বেদীয় ওষুধসহ এলোপ্যাথি ওষুধের কাঁচামাল বনের লতাপাতা, গাছগাছালি থেকে সংগৃহীত হয়।
৯) পশুচারণ ক্ষেত্র
বনভূমি পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কারণ এখানে প্রচুর ঘাস জন্মে। ফলে বনভূমিতে পশুচারণ ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। সুতরাং বলা যায়, পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে বনভূমির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
১০) ভূমিক্ষয় রোধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ
বিশেষ করে দেখা যায়, বনভূমি মাটির ক্ষয়রোধ করতে সাহায্য করে।বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং খুলনা অঞ্চলের বনভূমি মাটির ক্ষয়রোধ করে দেশকে রক্ষা করছে। তাছাড়া বনভূমি বন্যা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১১) প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বনভূমি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি রোধ করে থাকে। এতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।বিশেষ করে দেখা যায় যে, সমুদ্রপকূলীয় বনভূমি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি রক্ষা করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
১২) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
বনজ সম্পদ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অত্যন্ত সহায়ক। বনজ সম্পদ; যেমন-বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া ও লোম, বন্যহাতি, বানর ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে।
১৩) প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা
প্রাণীকুল শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে।অপরদিকে উদ্ভিদরাজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়।
১৪)প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে
কোন দেশের সীমান্তে নিবিড় বনভূমি থাকলে বহি:শত্রু সহজে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বনভূমি প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। বহি:শত্রুর আক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার ক্ষেত্রে বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৫) পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বনের কাঠ বিশেষ উপকারে আসে। যেমন-রেললাইনের স্লিপার, নৌকা, লঞ্চ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাস ও ট্রাকের অবকাঠামো তৈরিতে প্রচুর কাঠ ব্যবহৃত হয়।
১৬) জ্বালানি সরবরাহ
জ্বালানি শক্তি হিসেবে বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের জনসাধারণ বিশেষ করে দেখা যায় গ্রামীণ জনসাধারণের জ্বালানি শক্তির প্রায় পুরোটাই বনজ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করা হয়।জ্বালানি সরবরাহের উৎস হিসেবে বনজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম।
১৭) মরুভূমির বিস্তার রোধ
বনভূমির গাছের পাতা ভূমিতে পচে ভূমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে জমিতে প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়।এতে মরুভূমি বিস্তার লাভ করতে পারে না।
১৮) বৃষ্টিপাত
আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে বনভূমি বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গাছপালা বেশি থাকায় সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
১৯) গ্রীন হাউজের প্রভাব প্রতিরোধ
গাছপালা তথা বনভূমি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে গ্রীন হাউজের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে।
২০) চিত্তবিনোদন
বনভূমি চিত্তবিনোদনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। দেখা যায় বাংলাদেশের বনভূমি এলাকায় সিনেমার শুটিং, পিকনিক ইত্যাদি উপভোগের মাধ্যমে জনগণ সহজে চিত্তবিনোদন করতে পারে।
২১) বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল
প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল হিসেবে বনভূমির গুরুত্ব ব্যাপক। বন্যপ্রাণীর নিরাপদে বেঁচে থাকা এবং বংশবিস্তারে বনাঞ্চল সহায়তা করে।
২২) ভূগর্ভস্থ পানিস্তর
বনভূমি ভূগর্ভস্থ পানি স্তর ঠিক রাখতে সহায়তা করে। গাছপালা তথা বনভূমি বৃষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে ভূ- গর্ভস্থ পানি স্তরকে অপেক্ষাকৃত উপরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শেষ কথা
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বনভূমি শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য।আর কোন দেশের পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোট আয়তনের ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আয়তনের মাত্র১৭.৫১% বনভূমি রয়েছে। তাই বাংলাদেশের সরকার বনভূমির আয়তন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে নতুন বন সৃষ্টি কার্যক্রম চালু করেছে। আজকের আর্টিকেলে বাংলাদেশের বনজ সম্পদের বন্টন ও গুরুত্ব আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।আশা করি আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।